যুদ্ধের পথে কি ভারত ও পাকিস্তান? কোন পথে দক্ষিণ এশিয়া?
প্রকাশিত : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ৮:৪৫:০৯
কাশ্মীর যেন বারবার ফিরে আসে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির হৃদপিণ্ডে—রক্তাক্ত, স্পর্শকাতর এবং অনির্বাণ এক শ্বাসরুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে। সম্প্রতি পাহালগামে পর্যটকবাহী একটি গাড়িতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু ঘটার পর, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক ফের বিপজ্জনক মোড় নিয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অঞ্চলজুড়ে জেগে উঠেছে আতঙ্ক, যুদ্ধের শঙ্কা, আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ।
এই হামলার জন্য ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। অভিযোগ উঠেছে যে পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তইবা ও জইশ-ই-মোহাম্মদ এর পেছনে ছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিদেশ সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন, জরুরি বৈঠকে বসেন এবং একের পর এক কড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ইন্দাস জলচুক্তি স্থগিত, সীমান্তে সেনা মোতায়েন বৃদ্ধি, কাশ্মীরের অভ্যন্তরে ধরপাকড়—সবই যেন এক গোপন বার্তা দেয়: ভারত আর সহনশীল নয়।
অন্যদিকে পাকিস্তান দাবি করেছে, এই হামলার সঙ্গে তাদের কোনো যোগসূত্র নেই। বরং তারা ভারতের অভিযোগকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে আখ্যা দিয়েছে। পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করেছে, ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে এবং আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে। ইসলামাবাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ভারত কাশ্মীরের জনগণের দমন-পীড়নের চিত্র আড়াল করতে চায় এবং আন্তর্জাতিক মনোযোগ সরিয়ে দিতে সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি করছে।
তবে নরেন্দ্র মোদির এই কড়া প্রতিক্রিয়ার পেছনে রাজনৈতিক কৌশলও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। জাতীয়তাবাদী আবেগ জাগিয়ে তোলা, জনসমর্থন নিশ্চিত করা, কিংবা আসন্ন নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা ইস্যুতে দেশবাসীর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখার একটি সুচতুর চেষ্টার অংশ হিসেবেই অনেকে তা ব্যাখ্যা করছেন। মোদির রাজনৈতিক দর্শনে “শক্ত নেতা” ইমেজ বজায় রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, এবং এই পরিস্থিতি তাকে সে সুযোগই করে দিচ্ছে।
বিশ্বের দৃষ্টি এখন দক্ষিণ এশিয়ার দিকে নিবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র একদিকে ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগকে স্বীকৃতি দিলেও, উভয় পক্ষকেই সংযম অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্বিপাক্ষিক সংলাপের ওপর জোর দিয়েছে। চীন ও রাশিয়া—যাদের এই অঞ্চলে কৌশলগত স্বার্থ জড়িত—তারা সরাসরি অবস্থান না নিলেও সক্রিয় পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—এই উত্তেজনা কী সত্যিই যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে, নাকি এটি কেবল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপের খেলা? যুদ্ধ যদি হয়, তবে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের সংঘাত শুধু এই উপমহাদেশ নয়, গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে তুলবে।
কাশ্মীর নিয়ে দ্বন্দ্ব নতুন নয়। কিন্তু প্রতিবার যখন রক্ত ঝরে, প্রতিবার যখন রাজনৈতিক চক্রান্ত মানবিকতাকে ছাপিয়ে যায়, তখন বিশ্ব দেখেও যেন কিছু বলতে পারে না। আজ দরকার সাহসী সিদ্ধান্ত, বাস্তববাদী কূটনীতি ও মানুষের জীবনের মর্ম উপলব্ধি করা রাষ্ট্রনায়কত্ব।