প্রশ্নটা রয়েই যায়—সে সময়ের নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়ভার থেকে সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া কতটা মুক্ত?
প্রকাশিত : ২৫ মে ২০২৫, ২:০৮:৫৮
২৫শে জুন ২০১২ থেকে ২৫শে জুন ২০১৫ পর্যন্ত জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে সেনাবাহিনী আধুনিকায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সদস্যদের কল্যাণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে। তিনি ছিলেন নীতিতে অটল, কর্তব্যে কঠোর এবং অবস্থানে বলিষ্ঠ। সাবেক সেনাপ্রধান হিসেবে তার নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে।
যদিও তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব একটা সরব ছিলেন না, তবে সম্প্রতি একটি বক্তব্যে তিনি বলেন—“১/১১ যেন আর কখনো ফিরে না আসে।” তিনি উল্লেখ করেন, ১/১১-এর অভিজ্ঞতা জাতির জন্য ছিল অত্যন্ত কষ্টকর এবং অনেক মানুষ সে সময় অন্যায়ভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন। যদিও তিনি এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত বলেননি, তবে তার বক্তব্যটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
আমার দৃষ্টিতে, ইকবাল করিম ভূঁইয়া সেনাপ্রধান হিসেবে ছিলেন বলিষ্ঠ ও আপসহীন। তিনি এমনকি তৎকালীন নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকীর কথাও কর্ণপাত করেননি, যদিও এ নিয়ে তারেক সিদ্দিকী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তখন সেনাপ্রধানের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছিলেন।
তবে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়—২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন নিয়ে। তখন দেশের প্রধান বিরোধী দলসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করে। আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এই নির্বাচন ছিল অংশগ্রহণমূলক বা ইনক্লুসিভ নয়। সেই সময় ইকবাল করিম ভূঁইয়া ছিলেন সেনাপ্রধান। তাহলে তিনি কি আরও শক্ত অবস্থান নিতে পারতেন না? যদি তিনি উদ্যোগী হতেন, তাহলে হয়তো একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা যেত। আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা হয়তো অনেকটাই ভিন্ন হতো।
আমি আবারও বলছি—এটি ইকবাল করিম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তিগত সমালোচনা নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে সামনে এনে প্রশ্ন করার প্রচেষ্টা। কারণ আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে যারা প্রকৌশল বা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, অনেককেই পরে ওএসডি বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
তাই প্রশ্নটা রয়েই যায়—সে সময়ের নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়ভার থেকে সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া কতটা মুক্ত? হ্যাঁ, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শক্তিশালী অবস্থানে ছিলেন। তিনি চাইলে পদত্যাগ করে একটি ইনক্লুসিভ নির্বাচনের পথ খুলে দিতে পারতেন। কিন্তু সেটিও তিনি করেননি।
এই লেখা কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি আত্মসমালোচনামূলক প্রশ্ন তোলার চেষ্টা মাত্র।