বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা নিয়ে সংস্কার বা ন্যায়বিচারের কোনো প্রত্যাশা করা এখন প্রায় অসম্ভব। কারণ এই দুই ক্ষেত্রেই রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা সাধারণ নাগরিক তো বটেই, এমনকি একজন দায়িত্বশীল মানুষকেও হতাশায় নিমজ্জ
প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫০:২১
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা নিয়ে সংস্কার বা ন্যায়বিচারের কোনো প্রত্যাশা করা এখন প্রায় অসম্ভব। কারণ এই দুই ক্ষেত্রেই রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা সাধারণ নাগরিক তো বটেই, এমনকি একজন দায়িত্বশীল মানুষকেও হতাশায় নিমজ্জিত করে।
প্রথমে যদি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কোর্টের দিকে তাকাই, তাহলে আমরা দেখতে পাই কীভাবে একজন এডভোকেট হয়ে উঠেছেন একটি চক্রের প্রধান মুখ। এডভোকেট শাহিন, যিনি এক সময় ছিলেন তৌফিকা করিমের এক নম্বর এজেন্ট, তার মাধ্যমে তৌফিকা করিম আদালতে মামলা পরিচালনা করাতেন। তিনি নিজে কখনো আদালতে সরাসরি মামলায় অংশগ্রহণ করতেন না, বরং শাহিনকে দিয়ে করাতেন। কিন্তু আজও এই শাহিনের কিছুই হয়নি। বরং তিনি এখন বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দলে নাম লিখিয়েছেন এবং একইভাবে বিচারকদের কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে 'মুভ করা' কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন—যা আদালতের পবিত্রতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
এবার আসা যাক দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রসঙ্গে। এখানে রাজনৈতিক দ্বিচারিতা আরও প্রকট। হাজার হাজার মামলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলেও, রাষ্ট্র যখন মামলার বাদী—তখন প্রসিকিউশনের ভূমিকা হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকার দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মাহমুদ জাহাঙ্গীর সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে একই পদে বহাল। তিনি প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, যার কারণে তিনি বছরের পর বছর এই গুরুত্বপূর্ণ পদ আঁকড়ে ধরে আছেন। তাঁর ছেলে একজন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হওয়াও তাঁকে ‘untouchable’ করে রেখেছে। এমনকি তিনি মির্জা আব্বাসসহ বহু মামলায় অভিযুক্তদের খালাস পেতে সহযোগিতা করেছেন বলে আদালতপাড়ায় কথিত। একজন পক্ষপাতদুষ্ট প্রসিকিউটর রাষ্ট্রের হয়ে কীভাবে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে পারেন?
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হচ্ছে ওয়াদুদ সাহেব, যিনি বর্তমানে দুদকের পরিচালক (লিগাল)। এই ব্যক্তি জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার কর্মকর্তা হয়েও বিগত পাঁচ বছর ধরে একই পদে বহাল। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বহু সাধারণ নাগরিককে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করতে মামলার ব্যবস্থা করেছেন। এখন তাঁকে একই বিভাগের মহাপরিচালক পদে পদোন্নতি দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ব্যক্তির বদল হচ্ছে না—শুধু পদ-পদবির হাত বদল হচ্ছে। দুর্নীতির যে মূল কেন্দ্রবিন্দু, তাকে না ছুঁয়ে শুধু রূপ পাল্টে দেওয়া হচ্ছে।
এই চিত্রই বলে দেয়, রাষ্ট্রে কোনো মৌলিক সংস্কার সম্ভব নয় যদি না বিচারব্যবস্থা ও তদন্ত সংস্থাগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করতে নিয়োগ, পদোন্নতি, মামলা পরিচালনা—সবই হচ্ছে একটি পরিকল্পিত কাঠামোর ভেতর দিয়ে। এর বাইরে গিয়ে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখা এখন শুধু অবাস্তব কল্পনা। ধারাবাহিক চলবে...