প্রকাশিত : ১০ জুন ২০২৫, ১২:৫৪:০১
ইউটিউবার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর এস এ সাব্বির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গত এপ্রিল থেকে কারাগারে আছেন বলে জানা গেছে। জুনের প্রথম থেকে হঠাৎই ফেসবুকে ‘সাব্বিরকে খুঁজে না পাওয়া’, ‘তাকে কোথায় আটক রাখা হয়েছে’ – দেশ-বিদেশ থেকে প্রশ্ন তোলা হলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এপ্রিল মাসে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাকে গ্রেফতার করে বনানী থানা পুলিশ। রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ৫ এপ্রিল বনানী থানার এক পুলিশ সদস্য বাদী হয়ে জননিরাপত্তা আইন এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, ইউটিউবার সাব্বিরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই আইনে একটি মামলায় তিনি কারাগারে আছেন। যদিও শুরুতে কেউই তথ্য দিতে রাজি হননি।
জানা গেছে, গত ২৩ মার্চ বনানী থানায় মুনতাসির মামুন নামে একজন ব্যক্তি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে তিনি অভিযোগ করেন, ইউটিউবার সাব্বির সামাজিক মাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকারবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রচার করছেন এবং দেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছেন। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, “এস এ সাব্বির” নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল ও টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক ভিডিও প্রকাশ করে বাদী মুনতাসিরসহ জনৈক মাবরুর রশিদ বান্না ও মাহদি আমিনকে ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য বনানীর বাদীর অফিসে বসে যেভাবে মেজর খালেদ মোশারাফকে হত্যা করা হয়েছিল ঠিক সেইভাবেই সেনাপ্রধানকে ভারতের এজেন্ট বানিয়ে ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে অবরুদ্ধ করে হত্যার পরিকল্পনা করছে। এছাড়াও সাব্বির তার ভিডিওতে আরও বলেন যে, মুনতাসির, মাবরুর রশিদ বান্না ও মাহদি আমিন জঙ্গিদের মদতে ও অর্থায়নে বাদীর অফিসে বসে বাংলাদেশকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করছে।" এছাড়াও বিবাদী তার ভিডিওতে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেলিব্রেটি, সোশাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের সঙ্গে জড়িত বড় বড় সেলিব্রেটি ইনফ্লুয়েন্সাররা এই ধরনের কাজে সহায়তা করছে বলে তথ্য প্রকাশ করেন।" ভিডিওতে আরও বলা হয়, তারা জঙ্গিদের মদতে বাংলাদেশকে ধ্বংস করার পরিকল্পনায় লিপ্ত।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় গত ৪ এপ্রিল রাতে মুগদা থানাধীন একটি বাসা থেকে সাব্বিরকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন, একটি মাইক্রোফোন, একটি ক্যামেরা, একটি মেমোরি কার্ড ও দুইটি পাসপোর্ট জব্দ করে পুলিশ।
পরদিন, ৫ এপ্রিল বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইমদাদুল হক বাদী হয়ে ‘জননিরাপত্তা আইন’ এবং ‘সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) আইন ২০১৩’র ৬(১)(ক)(ঈ)/১২ ধারায় সাব্বিরসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, “২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ইউটিউব, ফেসবুক ও টিকটকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী গুজব ছড়িয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেন সাব্বির। এ কাজে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরাও তার সঙ্গে যুক্ত ছিল।”
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাব্বির অভিযোগের কিছু অংশের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, তিনি তার ভিডিওগুলোতে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছিলেন এবং দেশে অস্থিরতা তৈরির উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন।
গ্রেফতারের পরদিন ৫ এপ্রিল আদালতে হাজির করে পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ড চাইলেও আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
গ্রেফতার সাব্বির গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার উত্তর ঘটিয়া হেলাল সরকারের ছেলে। তিনি পরিবারের একমাত্র সন্তান। তারা বাবা সাঘাটা থানার উল্লাহ বাজারে লেপ-তোষকের ছোটখাটো একটি দোকান করেন। ৫ আগস্টের পর তিনি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখেন।
এ বিষয়ে সাঘাটা থানার ওসি মো. মশিউর রহমান বলেন, “সাব্বির ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক ছিলেন। দুই মাস আগে তাকে ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়। সাব্বির তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নভাবে চলছিল। তার বাবা হেলাল সরকার উল্লাহ বাজারে একটি লেপ-তোষকের দোকান চালান। সাব্বির পরিবারের একমাত্র ছেলে হলেও তার পরিবারের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না।”
এইচএস