আজ সেনাপ্রধানকে ঘিরে যে কটাক্ষ ছড়ানো হচ্ছে, তা ব্যক্তি আক্রমণ নয় বরং একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রচ্ছন্ন আঘাত!
প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২৫, ১২:১৯:০৮
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অস্থিরতা ও বিভ্রান্তিতে পরিপূর্ণ। একটি জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একদিকে দেশের সেনাবাহিনী বলছে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, অন্যদিকে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিও তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কণ্ঠে জানিয়ে দিয়েছেন, তারা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চান। এতদসত্ত্বেও আশ্চর্যজনকভাবে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জাপানে বসে ঘোষণা দেন, আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এ ধরনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য শুধু সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে না, বরং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আস্থাহীনতাকেও আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এই প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে বর্তমান সেনাপ্রধানকে নিয়ে বিতর্ক। এমন এক সময় ছিল, যখন শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন—সেই সংকটময় মুহূর্তে সেনাপ্রধান ব্যক্তিগত ক্ষমতার লোভে না পড়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পথ সুগম করেছিলেন। দেশের জনগণ, এমনকি আন্তর্জাতিক মহলও তখন তার প্রশংসায় মুখর ছিল। অথচ আজ, রাজনৈতিক সুবিধাবাদী একটি মহল সেই একই ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কেন? কারণ স্পষ্ট—এই মহল চায় না কোনো নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, জনপ্রিয় এবং বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রাজনীতির বাইরে থেকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক। তারা জানে, সেনাবাহিনীর গ্রহণযোগ্যতা যদি অক্ষুণ্ণ থাকে, তবে ক্ষমতায় টিকে থাকা বা ক্ষমতা দখলের ফায়দা তারা তুলতে পারবে না।
আজ সেনাপ্রধানকে ঘিরে যে কটাক্ষ ছড়ানো হচ্ছে, তা ব্যক্তি আক্রমণ নয় বরং একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রচ্ছন্ন আঘাত। এটি কোনো নিছক মতবিরোধ নয়—বরং একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যেখানে রাষ্ট্রীয় ভারসাম্য ধ্বংস করে ব্যক্তিগত বা দলীয় সুবিধা আদায়ের চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকবে, তর্ক থাকবে—এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা ও মর্যাদাকে টেনে নামানোর এই প্রবণতা ভয়ঙ্কর এবং রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার জন্য বিপজ্জনক।
বাংলাদেশের জনগণ অনেক সচেতন। তারা জানে কে স্বার্থপর, কে দায়িত্বশীল। তারা মনে রাখে কে সংকটে পাশে থেকেছে, কে পালিয়ে গেছে। আজ যখন নতুন করে দেশকে আরেকটি সংকটের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, তখন জনগণের পক্ষ থেকেই একটিই বার্তা আসা দরকার—দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ ও নিরপেক্ষতা যারা বজায় রাখে, আমরা তাদের পাশেই থাকবো।