যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও জাতিসংঘের মাধ্যমে পর্দার আড়ালে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে!
প্রকাশিত : ১৪ মে ২০২৫, ৫:৪৩:২৫
২০২৫ সালের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ভারতের কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ নাগরিক নিহত হওয়ার পর ভারত সরকার তীব্র সামরিক প্রতিক্রিয়া জানায়। "অপারেশন সিন্ধুর" নামে ভারতের বিমানবাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। পাকিস্তান পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে ভারতের তিনটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করে এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় তীব্র গোলাবর্ষণ শুরু করে। সীমান্ত সংঘাত এখন পরিণত হয়েছে এক সরাসরি দ্বিপাক্ষিক যুদ্ধে। উভয় দেশের সেনাবাহিনী প্রস্তুতিমূলক মোতায়েন এবং যুদ্ধকালীন সরঞ্জাম একত্রিত করছে, যার ফলে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে "ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি" হয়ে উঠেছে যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণের প্রধান হাতিয়ার। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও জাতিসংঘের মাধ্যমে পর্দার আড়ালে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে, যার মূল উদ্দেশ্য—উভয় পক্ষকে আলোচনায় আনানো এবং বৃহৎ সংঘাত এড়ানো। ভারত এবং পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তা পর্যায়ে কথাবার্তা শুরু হলেও তা এখনও আনুষ্ঠানিক শান্তি প্রক্রিয়ায় রূপ পায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে যদি কোনো চুক্তি হয়, তা হবে সামরিক কৌশল নির্ভর একধরনের "ডিফেন্স-নেগোশিয়েশন", যেখানে নিরাপত্তা চুক্তি, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং সীমান্ত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে কথা হতে পারে।
এদিকে মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং আরাকান আর্মির উত্থান রাখাইন অঞ্চলে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করেছে। বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সীমান্তে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। ভারত, চীন এবং থাইল্যান্ড মিলে যে "মানবিক করিডোর" স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে, তা মানবিকতার আড়ালে একটি সুসংগঠিত সামরিক ও কৌশলগত অভিযান হিসেবে দেখা হচ্ছে। মিয়ানমারে এই করিডোরের বাস্তবায়ন মানে সেখানে যৌথ বাহিনীর প্রবেশাধিকার এবং তথ্য গোয়েন্দা তৎপরতা চালানোর বৈধতা পাওয়া।
বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো করিডোর প্রস্তাবে সম্মতি দেয়নি, তবে সীমান্তের বাস্তবতায় ঢাকা সামরিক এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় জড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশও নিজের সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে মিয়ানমারে মুভমেন্ট পর্যবেক্ষণ করছে। এখানে বাংলাদেশও এক প্রকার "ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি" অনুসরণ করছে—যেখানে সীমান্তে শক্ত অবস্থানের পাশাপাশি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে meanwhile জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনীতিতে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে বলে জানিয়েছে, কিন্তু বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এখানে "ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি" এক ভিন্ন মাত্রায় কাজ করছে—অর্থাৎ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নির্বাচন-পূর্ব স্থিতিশীলতা রক্ষায় সক্রিয় হয়েছে, যার প্রভাব রাজনীতির বাইরেও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পড়ছে।
ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিস্থিতিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং দিল্লির কৌশলগত স্বার্থে একটি পূর্বাভিজ্ঞানুযায়ী সরকার চায়। চীন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে নির্বাচনে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকলেও পর্দার আড়ালে ঢাকা-বেইজিং সামরিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন “ডেমোক্রেটিক স্পেস” নিশ্চিত করার কথা বললেও তাদের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা চ্যানেল ব্যবহার করে নির্বাচনপূর্ব পর্যবেক্ষণে সক্রিয়।
এই মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া একটি সংকটপূর্ণ এবং টেকটনিক রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়িয়ে। একদিকে যুদ্ধ, অন্যদিকে করিডোর, তৃতীয়দিকে নির্বাচন—এই তিন ক্ষেত্রেই “ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি” হয়ে উঠেছে অন্যতম শক্তি-সাম্য স্থাপনকারী উপাদান। রাষ্ট্রগুলো শুধু কথার মাধ্যমে নয়, সেনা এবং গোয়েন্দা কাঠামো ব্যবহার করেই ভবিষ্যতের কৌশল নির্ধারণ করছে।