সমঝোতার পথ খুঁজছন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল
দিনভর বৈঠক
প্রকাশিত :
১০ অক্টোবর ২০২৩, ১:১৬:৩৫
আপডেট :
১০ অক্টোবর ২০২৩, ১:১৬:৩৫
নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটা সমঝোতার পথে আনতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। সোমবার সিরিজ বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে। এসব বৈঠকে তারা জানতে চেয়েছেন আগামী নির্বাচন বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার কোনো সুযোগ আছে কিনা। বিদ্যমান ব্যবস্থার বাইরে নির্বাচনকালীন সরকার হতে পারে কিনা এমন বিষয়ও তারা নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছেন।
নির্বাচনের প্রশ্নে ছাড় দেয়া বা সমঝোতা করার সুযোগ আছে কিনা এ বিষয়টি আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছে মার্কিন প্রতিনিধিদল। সংবিধান লঙ্ঘন করে কোনো ছাড় বা সমঝোতার সুযোগ নেই বলে তাদের জানানো হয়েছে। রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হওয়া বৈঠক চলে আড়াইটা পর্যন্ত। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়া দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত অংশ নেন। বৈঠক শেষে মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের পক্ষ থেকে সেখানে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কিছু বলা হয়নি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৈঠকে কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা তুলে ধরেন। বাংলাদেশে নির্বাচনী পরিবেশ মূল্যায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিনিধিদল এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা অন্যদের মতো আমাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন ১২ সদস্যবিশিষ্ট এই প্রতিনিধিদল। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আমরা আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ নিয়েও কথা হয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় বলে ঢাকা সফররত মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলকে জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল সকালে গুলশানস্থ চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দেড় ঘণ্টাব্যাপী মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আজকে বাংলাদেশের নির্বাচন শুধু দেশের মধ্যে নয়, সারা বিশ্বেই প্রশ্নবিদ্ধ। বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চায়, সারা বিশ্বও একইভাবে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চায়। এরই অংশ হিসেবে এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল এসেছিল, সবার সঙ্গে কথা বলেছে। তারপর তারা সিদ্ধান্ত নিলো আগামী নির্বাচনে তারা পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না। কারণ, এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। আমরা বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলেছি, শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতির কোনো উন্নয়ন হয়নি, বরং আরও অবনতি হয়েছে। গত কয়েকটি নির্বাচনে তারা ভোটাধিকার হরণ করেছে। এখন ভোট চুরির প্রকল্প আরও শক্তিশালী হয়েছে। দমন-নিপীড়ন আরও বেড়েছে।
বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিদল কী জানতে চেয়েছে এই প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ঘুরেফিরে একটাই প্রশ্ন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও আন্তর্জাতিকমানের বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হবে কিনা, সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হলে কী প্রয়োজন? শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা ভোট চুরির একটি প্রকল্প নিয়েছে, যেটিকে তারা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। এখান থেকে মুক্ত হতে হলে শেখ হাসিনার অধীনে যে নির্বাচন হবে, সেটি বাতিল করতে হবে।
অপরদিকে জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকারে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। বৈঠকে বারবার নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি উঠে আসে। পর্যবেক্ষক দল নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে জাতীয় পার্টির কাছে জানতে চায়। বৈঠক শেষে পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি। প্রস্তাব পেলে বিবেচনা করা হবে।
জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বৈঠকে অংশ নেন দলটির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর রানা মোহাম্মদ সোহেল (অব.), ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান ও চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাসরুর মওলা।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে রানা মোহাম্মদ সোহেল বলেন, তারা এসেই আমাদের প্রথমে জানিয়ে দিলেন, বৈঠকের উদ্দেশ্য সরকারকে পরামর্শ দেয়া। তারা বললেন, বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এজন্য নির্বাচনের বিষয়য়ে কী পরামর্শ দিলে ভালো হয় এজন্যই তিন দলের (আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি) সঙ্গে বৈঠক করছি। এরপর আমাদের কাছে নির্বাচন বিষয়ে তারা জানতে চাইলেন। আমরা বললাম, বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে এই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। মানুষের ভোটের যে অধিকার তা নিয়ে আস্থাহীনতা তৈরি হবে সেটা আমরা বলেছি। তারা বলেন, জাতীয় সরকারের বিষয় সংবিধানে আছে কিনা? তখন আমরা বলেছি, কখন জাতীয় সরকার সংবিধানে ছিল। কখন বাদ পড়লো এসব।